বেতন পান না ৫ শতাধিক শিক্ষক, দেনার দায়ে আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে

বেতন পান না ৫ শতাধিক শিক্ষক, দেনার দায়ে আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে

বেতন পান না ৫ শতাধিক শিক্ষক, দেনার দায়ে আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে
বেতন পান না ৫ শতাধিক শিক্ষক, দেনার দায়ে আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে

অনলাইন ডেস্ক: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বিজিবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক দেলওয়ার হোসেন। ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন।

বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলেও তিনি পাচ্ছেন না। তার বেতন প্রদানের ফাইলটি উপজেলা ও জেলা থেকে রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের দপ্তরে একাধিকবার পাঠানো হলেও সেখানে নানা অজুহাতে বাতিল করা হচ্ছে।

বিনা বেতনেই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন তিনি। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে।

শুধু দেলওয়ারই নন, এ উপজেলায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক বিনা বেতনে চাকরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় ধার-দেনার চাপে অনেকে অন্যের বাড়িতে চুক্তিভিত্তিক শ্রম বিক্রি করছেন। দেনার চাপে আত্মহত্যা করেছেন এক শিক্ষক। তার পরও বেতন-ভাতার বিষয়ে কোন সুরাহা হচ্ছে না তাদের।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) পালন হচ্ছে শিক্ষক দিবস। দিবসটি উদযাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে জেলা ও উপজেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নন-এমপিও শিক্ষকদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এতে হতাশ তারা। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, এগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। আগামীতে সমাধান হয়ে যাবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলায় নন-এমপিও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২টি, দাখিল মাদরাসা ১০টি এবং কলেজ তিনটি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০০ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। কর্মচারী রয়েছেন শতাধিক। যারা প্রায় ২০ বছর ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ শিক্ষক নিয়মের নানা বেড়াজালে আটকা পড়ে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বছরের পর বছর ধরে।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপজেলার খনগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দীলিপ কুমার বেতন না পেয়ে ধার-দেনা করে সংসার চালাতে গিয়ে একসময় দেনার চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। প্রায় ছয় বছর আগে এ ঘটনা ঘটে। তখন বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর কয়েক বছর পর বেতন ছাড়াই মৃত্যুবরণ করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সচীন চন্দ্র। স্কুলটি এখনো টিকে আছে কোনোমতে।

বিজিবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেলওয়ার হোসেন জানান, তার স্কুল এমপিওভুক্ত। ১৬ বছর ধরে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফলাফলও ভালো। অন্য শিক্ষকরা বেতন পেলেও ১৮ বছর ধরে তিনি বিনা বেতনে চাকরি করছেন। সংশোধিত পত্রমূলে তার বেতনের জন্য ফাইল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কয়েকবার রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হলেও সেখানে নানা অজুহাতে বাতিল করা হচ্ছে। উপপরিচালক সংশোধিত পরিপত্র মানতে চাচ্ছেন না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মফিজুল হক জানান, তাদের অনেক শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে আন্দোলন করা হচ্ছে। এখন সে দাবির সঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার দাবি যুক্ত হয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে তার বাস্তবায়ন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ বলেছেন, ডিডি স্যার ইচ্ছা করলেই দেলওয়ারের বেতনটা দিতে পারেন। কেন যে দিচ্ছেন না, বুঝছি না। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে তাদের এমপিও হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মো. আলাউদ্দীন আল আজাদ জানান, সব শিক্ষকের বেতন হওয়া দরকার। আমরা চেষ্টা করি ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি এড়িয়ে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করার। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তা বোঝার চেষ্টা করেন না।

বেতনের ফাইল বাতিল করার বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিক্ষক দেলওয়ারের স্কুলটি জুনিয়র লেভেলে এমপিওভুক্ত। সিনিয়র পর্যায়ে এমপিও না থাকায় বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। সংশোধিত পরিপত্র বিষয়ে উপপরিচালক জানান, সেটা সিনিয়র পর্যায়ের। জুনিয়রের এমপিওর জন্য নয়।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply